মা আনন্দময়ীর জন্ম ১৮৯৬ খ্রিষ্টাদ্বের ৩০ এপ্রিল।ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার খেওড়া গ্রামে।পিতা বিপিনবিহারী ভট্টাচায, মা মোক্ষদা সুন্দরী। বিপিনবিহারীর পৈতৃক নিবাস ছিল বিদ্যাকুটে।
আনন্দময়ীর আসল নাম র্নিমলা সুন্দরী।গ্রামের পাঠশালায় র্নিমলার পড়াশোনা শুরু হয়।কিন্তু পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি।ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে দিব্যভারের প্রকাশ ঘটে।হরিনাম র্কীতন হলে তিনি আকুল হয়ে শুনতেন।
বাংলা ১৩১৫ সালের (১৯০৮ খ্রিষ্টাদ্ব) ২৫ মাঘ র্নিমলার বিয়ে হয়।তখন তাঁর বয়স তের শেষ হয়ে চৌদ্দ বছর পড়েছে।স্বামী রমণীমোহন চক্রবর্তী।বাড়ি বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে।বিয়ের পর র্নিমলা স্বামীর নাম দেন ভোলানাথ।
ভোলানাথ বাজিতপুরে সেটেমেন্ট বিভাগে চাকরি করেন।১৩২৪ সালের (১৯১৭খ্রিষ্টাদ্ব) র্নিমলা স্বামীর কমস্থলে যান।তাঁর মধ্যে ক্রমশই দিব্যভার প্রকটিত হতে থাকে।কোথাও কৃষ্ণনাম শুনলে কৃষ্ণপ্রেমে তিনি আকুল হয়ে যান।একবার ভূদেবচন্দ্র বসুর বাড়িতে র্কীতন হচ্ছে::
হরিহরয়ে নমঃ কৃষ্ণযাদবায় নমঃ।
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নমঃ।।
র্নিমলা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।র্কীতন শুনতে শুনতে এক সময় তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।তখন তাঁর দেহ থেকে দিব্য আলো প্রকাশিত হচ্ছিল।সবাই ভয় পেয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠলেন।এভাবে র্নিমলার মধ্যে মহাভাবের শুরু।সাধারণ মানুষের অজ্ঞাতে তাঁর শরীরে চলতে থাকে সাধন-ভজনের নানারকম লীলা।দিব্য জ্যোতির আভায় উজ্জল হয়ে ওঠে তাঁর সমস্ত শরীর।
১৯২৪ খ্রিষ্টাদ্বে ভোলানাথ চলে আসেন ঢাকার শাহবাগে।তখনকার নবাবের বাগানের তও্বাবধায়কের নিয়ে।সঙ্গে র্নিমলা আসেন।এই শাহবাগে মা কালীর মন্দিরে র্নিমলার মধ্যে মাতৃমৃর্তি প্রকটিত হয়।তখন থেকেই তিনি মা আনন্দময়ী নামে খ্যাত হন।এখানেই তাঁর সাধন-ভজন চলতে থাকে।১৯২৬ খ্রিষ্টাদ্বে সিদ্ধেশ্বরীতে তাঁর আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।এটি তাঁর আদি আশ্রম।
১৯৩২ খ্রিষ্টাদ্বে মা আনন্দময়ী স্বামীসহ চলে যান দেরাদুনে।ফলে তাঁর লীলাক্ষেএ ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হয় উওর ভারতে।সেখানে তাঁর দিব্যভারের পরিচয় জানাজানি হলে অনেকে তাঁর ভক্ত হয়ে যান।ভারতের অনেক জ্ঞানী-গুণী তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।তাঁদের সঙ্গে মায়ের সাক্ষাৎ হয়েছে।এমনকি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, মিসেস ইন্দিরা গাদ্ধী প্রমুখ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে।
মা আনন্দময়ী নিজে ভগবৎপ্রেমী ছিলেন।তাই ভারতের জনগণকেও ভগবৎপ্রেমী করার কাজে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।তিনি উপমহাদেশের পূব-পশ্চিম, উওর-দক্ষিণ সবই পরিভ্রমণ করেছেন।প্রাচীন ভারতের অনেক লুপ্ত তপোবন ও র্তীথস্থান তিনি পুনরুজ্জীবিত করেছেন।ভারতীয় সংস্কৃতির মমস্থল, সহস্র ঋষির তপোভূমি নৈমিষারণ্যকে তিনি জাগিয়ে তোলেন।এখন এখানে র্কীতন, নাচ, গান, ধমগ্রস্থপাঠ, সংসঙ্গ ইত্যাদি কমকান্ড চলছে।এভাবে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে সুপ্ত, লুপ্ত ধমস্থানকে জাগ্রত করেছেন।সেখানে যাগ-যজ্ঞ, মন্দির, বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের লক্ষ-লক্ষ মানুষের সনাতন ধর্মের ভাবধারায় উজ্জীবিত করে তুলেছেন।মানুষের মনকে ভগবৎপ্রেমী করার জন্য অশেষ প্রেরণা দিয়ে গেছেন।বাংলাদেশের রমনাও খেওড়ার দুটি আশ্রমসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনি ২৫ টি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন।হিন্দু ধম ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেএ এটি মায়ের সবিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান।মা আনন্দময়ী বলতেন, যে যে অবস্থায় আছ, সেই অবস্থায় থেকেই কম করে যাও।নাম কর, শুধু নাম।নামেই সব হয়।
১৯৮২ খ্রিষ্টাদ্বের ২৭ আগষ্ট মা আনন্দময়ী পরলোক গমন করেন।হরিদ্বারে কণখল আশ্রমে গঙ্গার তীরে তাঁর মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়।