অনেক কঠিন পরীক্ষা ও সাধনার দ্বারাই কেবল একজন নাগা সন্ন্যাসী হয়ে ওঠা সম্ভব । একজন নাগা সন্ন্যাসী কাম ও ক্রোধ ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেন।
নাগা সন্ন্যাসী হয়ে ওঠার আগে তাঁদের যা করা লাগে তা হল নিজেদের শ্রাদ্ধ অর্থাৎ তর্পন নিজেদেরই করতে হয়। চিরতরে ছিন্ন করা হয় সাংসারিক সম্পর্ক । শুরু হয় সন্ন্যাস জীবন, ঠিক যেন একটি নতুন জীবন শুরু হয় পুনর্জন্মের মাধ্যমে।
নাগা সন্ন্যাসী পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই হয়ে থাকেন। কুম্ভমেলাতে খুব সহজেই এদের দেখা মেলে। নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য বেশ কিছু কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের।
ব্রহ্মমুহুর্তে মন্ত্রদান করা হয় নাগা সন্ন্যাসীদের।
ভক্তরা তাদেরকে ত্যাগের প্রতীক বলে মান্য করে ।একজন মানুষের নাগা সন্নাসী হয়ে উঠতে ২০ বছর সময় লেগে যায় প্রায়।
প্রতিষ্ঠানের মহাত্মারা আট বছর বয়স হলে লাখ লাখ টাকার দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা করেন এই সব শিশুদের কাছে।তাদের ছোট্ট একটা মন্ত্র দেওয়া হয় এই পরীক্ষায় পাশ করলে।
নাগা সন্যাসীদের রহস্যময় জীবন
তাদের ১২ বছর দেয়া হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এই সময় নিজেদের খাবার তারা নিজেরাই তৈরি করে।
তাছাড়া নিজেদের গুরুর সেবাও তাদের করতে হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোন ভুল হলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
নাগা সন্ন্যাসীরা শরীরে একফালি কাপড় পর্যন্ত পড়েন না। তারা সারা শরীরে ছাই মেখে থাকেন। বিশেষ এক পদ্ধতিতে এই ছাই তৈরি করেন তারা।
বলা হয় এই সন্ন্যাসীরা যে ভস্ম শরীরে মেখে রাখে, সেই ভস্ম তাদের বিষাক্ত সাপ, মশা এসবের হাত থেকে রক্ষা করে।
নাগা সন্ন্যাসীরা ব্রহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে ওঠেন। তারপর হবন, ধ্যান, বজ্রোলি, প্রানায়ম, ও কপাল ক্রিয়া সম্পন্ন করেন তারা।
অনেক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারও দীক্ষিত হয়েছেন নাগা সন্ন্যাসীতে। শুধু পরিবার বা পরিজন নয়, পার্থিব সব ইচ্ছে, কাম, গর্ব- সব কিছুই মন থেকে ত্যাগ করতে হয় নাগা সন্ন্যাসীদের। কঠিন এই সব ক্রিয়াই তাঁদের সন্ন্যাস লাভের একমাত্র পথ।
নাগা সন্ন্যাসী শুধু পুরুষরাই হতে পারেন এমনটা নয়, মহিলারাও হতে পারেন নাগা সন্ন্যাসিনী।
মহিলা নাগা সন্নাসিনীরা সেলাইবিহীন হলুদ রঙের কাপড় পরিধান করেন। নাগা সন্ন্যাসীনী হয়ে ওঠার আগে তাদের প্রমাণ করতে হয় যে, ঈশ্বরেই সম্পূর্ণ সমর্পিত, এবং পার্থিব বাসনা-কামনায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাদের ।
নিজেদের পিণ্ড তাদের জীবিত অবস্থাতে নিজেদেরই দিতে হয়।
নাগা সন্ন্যাসী হয়ে ওঠার আগে একজন মহিলাকে ৬ থেকে ১২ বছর ধরে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। যদি সফল হন, কেবল তখনই গুরুর নির্দেশে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হতে পারেন তিনি।
সন্ন্যাস গ্রহণের আগে মহিলাদের মাথা নেড়া এবং গঙ্গা স্নান করতে হয়।
নাগা সন্ন্যাসিনীরা কপালে এক বিশেষ টিকা লাগান। সন্ন্যাসী-বৃত্তে নাগা সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীনীদের সমান মর্যাদা দেওয়া হয় এবং নাগা সন্ন্যাসিনীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা হয়।