পাবনার পদ্নার তীরবর্তী একটি গ্রাম হিমাইতপুর।সেই গ্রামে ১২৯৫ সালের ৩০ ভাদ্র (১৮৮৮ খ্রিষ্টাদ্বের ১৪ সেপ্টেম্বর) অনুকূলের জন্ম।পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা মনোমোহিনী দেবী।
হিমাইতপুরেই অনুকূলচন্দ্রের শৈশব, বাল্য কৈশোর অতিক্রান্ত হয়।হিমাইতপুর পাঠশালায় তিনি লেখাপড়া শুরু করেন।সেখানকার পাঠ শেষ হলে তিনি পাবনা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।এখানে নবম শ্রেনি পযন্ত পড়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।এ বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন।কিন্তু একজন সহপাঠী পরীক্ষার ফিসের টাকা যোগাড় করতে পারেন শুনে তাঁকে তিনি নিজের টাকা দিয়ে দেন।ফলে ঐবার তাঁর পরীক্ষা দেয়া হয়নি।পরের বার তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন।এরপর মায়ের ইচ্ছায় তিনি কোলকাতায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।তখন তাঁদের সংসারে আর্থিক অনটন চলছিল।তাই অনেক কষ্ট করে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।একদিন প্রতিবেশী এক ডাক্তার হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় ওষুধসহ তাঁকে বাকস দেন।তা দিয়ে তিনি কুলি-মজুরদের সেবা শুরু করেন।সেবার আনন্দের মধ্য দিয়ে যা আয় হতো তাতেই তাঁর দিন চলে যেত।
অনুকূলচন্দ্র ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।সেখানে তিনি চিকিৎসা কম শুরু করেন।এতে তাঁর অভূতপূব সাফল্য আসে।কিন্তু তিনি উপলদ্ধি করলেন, মানুষের দুঃখের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কেবল শারীরিক চিকিৎসা নয়, মানসিক ও আত্নিক চিকিৎসাও দরকার।কারণ শরীরের সঙ্গে মন ও আত্নার নিবিড় সম্পক রয়েছে।তাই তিনি মানসিক ও আত্নিক চিকিৎসা শুরু করলেন।
অনুকূলচন্দ্র ছিলেন সমাজের অসহায়, অবহেলিতদের বন্ধু।তাদের নিয়ে তিনি র্কীতনদল গঠন করেন।র্কীতনের মধ্য দিয়ে তিনি তাদের মানসিক শান্তির বিধান করেন।অনেক শিক্ষিত তরুণও এগিয়ে আসেন।তাঁর এই র্কীতন এক সময় একটি আন্দোলনে পরিণত হয়।সবাই তাঁকে তখন ডাক্তার না বলে বলত ঠাকুর‘।সেই থেকে তিনি ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নামে পরিচিত হন।তাঁর খ্যাতি ক্রমশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষ যাতে সৎপথে থাকে, সৎ চিন্তা করে সেজন্য ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হিমাইতপুরে প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম।এর মাধ্যমে তিনি তাঁর অনুসারীদের আত্নিক জন্য উন্নতির জন্য ব্রক্ষজ্ঞান লাভে সহায়তা করতেন।দলে-দলে লোক তাঁকে গুরু মেনে এই সঙ্গে যোগ দিতে লাগল।তিনি এই সঙ্ঘের মাধ্যমে ধর্মের সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটান।শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, সুবিবাহ-এই চারটি ছিল আশ্রমের মূল ভিওি।ব্রক্ষচয, গাহস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস-সনাতন আয জীবনের এই চারটি স্তরে জীবন যাপনের তিনি সকলকে অভ্যন্ত করে তোলেন।অনুকূলচন্দ্র লোকহিতার্থে প্রাচীন ঋষিদের আদর্শে তপোবন বিদ্যালয় দাবত্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।এর ফলে আধ্যাত্নিক জীবনের পাশাপাশি মানুষ জাগতিক জীবনেও উপকৃত হয়।মহাত্না গান্ধী সংসঙ্গের এই কমকান্ড দেখে অত্যন্ত ম্গ্ধ হন এবং এর প্রশংসা করেন।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাদ্বে অনুকূলচন্দ্র বিহারের দেওঘরে যান এবং সেখানে সৎসঙ্গের আদর্শে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।পরের বছর ভারত ভাগ হলে তিনি আর ফিরে আসেন নি।১৯৬৯ খ্রিষ্টাদ্বের ২৬ জানুয়ারি ৮১ বছর বয়সে তিনি দেওঘরেই দেহত্যাগ করেন।