চাণক্য ছিলেন ভারতীয় ইতিহাসের সব থেকে বড় ডিপ্লোম্যাট অর্থাৎ কূটনীতিক এবং তার নাম প্রাচীন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। তিনি একাধারে ছিলেন বড় পন্ডিত,কূটনীতিক, দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ।আবার চাণক্য ছদ্মনামেও পরিচিত ছিলেন তাকে কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও ডাকা হত। চাণ্যকের লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে‘ চাণক্য-নীতি ‘- হল শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। “চাণক্য নীতি” –তে ১৭ টি অধ্যায়ে রয়েছে এবং সেখানে জীবনে চলার পথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতির কথা বলা হয়েছে ।
১. সৎ হও কিন্তু বোকা নয়
চাণক্য নীতি অনুযায়ী সততা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চাণক্য বলেছেন- একজন মানুষকে কখনোই খুব বেশি সৎ হওয়া উচিত না কারণ একজন সহজসরল এবং সৎ ব্যক্তি তাঁর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো মুখোশধারী লোকদের চিনতে পারে না। যার ফলে খুব সহজেই অন্যরা তার ক্ষতি করতে পারে। আমরা অনেক সময় বেশি সৎ হতে গিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেই ডেকে আনি। এজন্য আমাদের হতে হবে কিছুটা কৌশলী। সততা অবশ্যই মহৎ গুন তবে সৎ থাকা উচিত কিন্তু বোকা নয়। অবশ্যই মনে রাখা উচিত কেউ যেন আপনার সততার সুযোগ নিয়ে আপনাকে বোকা বানিয়ে চলে না যায়।
২. নিজের গোপন বিষয় নিজের মধ্যে রাখো
চাণক্য নীতি অনুযায়ী নিজের গোপন বিষয় কখনোই অন্য কারোর কাছে বলা উচিত নয় হোক না সে আপনার কাছের মানুষ বা খুবই প্রিয়জন। কারণ তারা আপনার গুপ্তকথা অন্যদের বলে দিতে পারে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সেটাই ঘটে। তখন আপনার সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা তৈরী হয় মানুষের মনে। আপনি যদি কোন কথা শুধুমাত্র নিজের ভেতরেই না রাখতে পারেন, তাহলে অন্য জনের উপরে কি ভরসা আছে যে, সে কথাটি শুধুমাত্র নিজের ভিতরই রাখবে । নিজের গোপন কথা অন্য কাউকে বলা অনেকসময় ধ্বংসের কারণ হতে পারে । এজন্য কোন গোপন কথা শুধুমাত্র নিজের ভেতরেই না রাখা উচিত।
৩. দুর্বলতা প্রকাশ করতে নেই
চাণক্য বলেছেন যে সাপের বিষ নেই, সেই সাপের উচিত তার কাছে বিষ আছে এমনটা সবাইকে দেখানো। কারণ সাধারণত দেখা যায়, যারা শক্তিশালী তারা দুর্বলের উপর নিজের শক্তির প্রকাশ করে এবং তাদেরকে ছোট করার চেষ্টা করে । দুর্বল হওয়ার মধ্যে কোনো খারাপ কিছু নেই কিন্তু নিজের দুর্বলতা কারো সামনে প্রকাশ করলে তারা আপনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনার ক্ষতি করবে, সবার সামনে ছোট করার চেষ্টা করবে, এবং আপনাকে নিয়ে হাসি তামাশাও করবে। কারণ দুর্বলকে পদদলিত করেই তো সবলের যাত্রা শুরু হয়। তাই নিজের দুর্বলতা কখনোই অন্যের সামনে প্রকাশ করবেন না।
৪. অপরের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত
চাণক্য বলেছেন আমাদের উচিত অপরের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কারণ আমরা অনেক সল্প সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে আসি, আমাদের কাছে এত সময় নেই যে, আমরা প্রথমে ভুল করবো এবং তারপর সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেবো। যদি আপনি এমনটা ভেবে থাকেন যে, জীবনের প্রতিটি শিক্ষাই আপনি নিজের থেকে শিখবেন, তাহলে আপনার ভাবনায় অনেক ভুল আছে । কারণ আপনি যদি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তাহলে হয়তো আপনি এমন বয়সে গিয়ে সব কিছু বুঝতে পারবেন যে, যখন আর কোন কিছু করার মতোই শক্তি ও সময় আপনার কাছে থাকবে না । তবে অবশ্যই নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেবো আমরা কিন্তু যদি অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নেই তবে যে ভুলটা হয়তো ভবিষ্যতে করতে যাবো সেটা আগে থেকেই সচেতন হবো এবং হয়তোবা সেই ভুলটা আমরা আর করবো না।ফলে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি দ্রুততার সাথে আপনি জীবনে সফল হতে পারবেন।
৫. মূর্খ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব নয়
চাণক্য বলেছেন আমাদের একজন মূর্খ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা কখনোই উচিত নয়। কারণ খুব অল্প জ্ঞান থাকার কারণে তারা কখনোই আপনার চিন্তা ভাবনাকে সম্মান করতে পারবে না। মূর্খ ব্যক্তিকে তার নিজের ভালোর জন্যেও কোন কথা বললে, সেই কথাকে খারাপ ভেবে আপনাকে অপমান করে আপনাকে কষ্ট দেবে। তাই তাদের উপদেশ দেওয়া মানে সেটা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না । চাণক্য মনে করেন বন্ধুত্ব সর্বদা নিজের মতো অর্থাৎ নিজের লেবেলের কারো সাথে করা উচিত যারা আপনার ভাবনা চিন্তাকে বুঝবে এবং আপনাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে।
৬. অর্থ সঞ্চয় করা
চাণক্যের মতে ব্যক্তির জীবনে যেকোনে সময় বিপদ আসতে পারে। এজন্য আপনি যতই ধনবান হোন না কেন আপনার উচিত অর্থ সঞ্চয় করে রাখা । কখনই এটা ভাবা উচিত নয় যে, একজন ধনবান ব্যক্তির জীবনে বিপদ আসতে পারে না। একটা প্রবাদ আছে, গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত অর্থ সঞ্চয় করা।
৭. ভেবেচিন্তে কথা বলা
চাণক্য বলেছেন যে ব্যক্তি ভেবেচিন্তে কথা বলে তাকে কখনও অনুশোচনা করতে হয় না এবং এই ধরণের মানুষই জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। আপনি যে কাজ করতে যাচ্ছেন সেটি গোপন রাখুন যতক্ষণ না কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত । কারণ প্রায় সব মানুষই অন্যদের কাজে বা সফলতায় হিংসা অনুভব করে ।
তাই আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা শেষ করার আগ পর্যন্ত নিজের মনের মধ্যেই রাখো ভাল।
যখন সফল হবেন, তখন এমনিতেই সবাই
জানতে পারবে । সুতরাং আগে থেকে কাউকে
বলার প্রয়োজন নেই আপনি কি করতে চলেছেন।
৮.মুখে মধু অন্তরে বিষ এমন বন্ধু পরিত্যাগ করা
চাণক্য বলেছেন, যে আপনার সামনে মিষ্টি কথা বলে কিন্তু অন্যদের কাছে আপনার বদনাম করে, সেরকম মানুষ থেকে দশ হাত দূরে থাকা উচিৎ । এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখাই ভালো। কারণ তারা আপনার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।