সাধক রামপ্রসাদ

রামপ্রসাদ ছিলেন মাতৃসাধক।ব্রক্ষজ্ঞানে তিনি কালীর সাধনা করতেন।কালীই ছিল তাঁর নিকট ঈশ্বর।হরি, ব্রক্ষা, শিব, দুর্গা-সবই তিনি।

তাই রামপ্রসাদ বলেছেন,

কালী ব্রক্ষ জেনে মম

ধর্মাধম সব ভুলেছি।

বাংলা ১১২৭ সনের (১৭২০ খ্রিষ্টাব্দ) আশ্বিন মাসে রামপ্রসাদের জন্ম।পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাতীরে হালিশহর গ্রামে।পিতা রামরাম সেন এবং মাতা সর্বেশ্বরী দেবী।

রামপ্রসাদ বাল্যকাল থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।

অল্প বয়সেই তিনি সংস্কৃত, ফাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় দক্ষতা অজন করেন।

ষোল বছর বয়সেই তাঁর মধ্যে অসাধারণ কবিত্বশক্তির প্রকাশ ঘটে।কিন্তু সংসারের প্রতি তাঁর মন ছিল না।তাই সংসারমুখী করার জন্য তাঁকে বিয়ে করানো হলো।এীর নাম শর্রীণী দেবী।

কিন্তু রামপ্রসাদ সংসারমুখী হলেন না।মাতৃসাধনায় তাঁর মনোযোগ আরো বেড়ে গেল।সংসারের প্রতি তিনি আরো উদাসীন হয়ে পড়লেন।এমন সময় তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে।ফলে সংসারের সমস্ত দায় এসে পড়ে তাঁর ওপর।তাই অর্থোর্পাজনের জন্য তিনি একদিন কোলকাতা যান।

তখন কোলকাতার গরানহাটের জমিদার  ছিলেন দুর্গাচরণ মিএ।রামপ্রসাদ তাঁর জমিদারিতে মুহুরির পদে যোগদান করেন।তাঁর কাজ-হিসেব নিকেশ রাখা।কিন্তু তাঁর মনে মায়ের চিন্তা।তাই হিসাবের খাতায় তিনি মাতৃসঙ্গীত বা শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে চললেন।এ খবর একদিন জমিদারের কানে গেল।তিনি খাতাসহ রামপ্রসাদকে ডাকলেন।রামপ্রসাদ ভয়ে ভয়ে জমিদারের কাছে গেলেন।চাকরি বুঝি আর থাকবে না।কিন্তু হলো তাঁর বিপরীত।জমিদার রামপ্রসাদের শ্যামাসঙ্গীত পড়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন।তিনি বললেন, হিসাব করার জন্য তোমার জন্ম হয়নি।তোমার জন্ম হয়েছে আরো বড় কাজ করার জন্য।তুমি বাড়ি ফিরে যাও।মায়ের সাধনায় করো আর শ্যামাসঙ্গীত রচনা করো।তুমি যে ৩০ টাকা বেতন পেতে. তা তুমি নিয়মিত পাবে।

এভাবে জমিদার দুর্গাচরণ রামপ্রসাদের মাতৃভক্তি ও সঙ্গীত রচনার প্রতিভাকে সন্মান দেখালেন।রামপ্রসাদ চলে গেলেন তাঁর গ্রাম হালিশহরে।জমিদারের দেয়া টাকায় তাঁর সংসার কোনোমতে চলতে লাগল।আর একমনে তিনি মায়ের সাধনায় আর শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে চললেন।

রামপ্রসাদ গঙ্গার ঘাটে বসে আপন মনে স্মরচিত শ্যামাসঙ্গীত গাইতেন।তাঁর সুমধুর গান শুনে নৌকার মাঝিদের দাঁ থেমে যেত।একদিন নবাব ‍সিরাজ-দৌলা গঙ্গার উপর দিয়ে বজরায় যাচ্ছিলেন।তিনিও বজরা থামিয়ে মন ভরে রামপ্রসাদের গান শোনেন।তাঁর মন অতিশয় তৃপ্ত হয়।রামপ্রসাদের মাতৃসাধনা ও শ্যামাসঙ্গীতের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ও শুনতে পান এ কথা।একদিন তিনি স্বয়ং চলে আসেন হালিশহরে।রামপ্রসাকে অনুরোধ করেন রাজকবি হওয়ার জন্য।কিন্তু মাতৃসাধনা ছাড়া তিনি আর কিছুই চান না।তাই মহারাজার প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন।মহারাজা রামপ্রসাদের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কিছু নিষ্কর জমি দান করেন।আর তাঁকে অনুরোধ করেন বিদ্যাসুন্দর নামে একটি কাব্য রচনা করতে।ভক্তিকবি রামপ্রসাদ শ্যামা মায়ের অনুগ্রহে যথাসময়ে উক্ত কাব্য রচনা করে তুলে দেন মহারাজার হাতে।মহারাজা তাঁর সভাকবি  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরকে কাব্যটি পড়তে দেন।ভারতচন্দ্র কাব্যটি গড়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী মহারাজা রামপ্রসাদকে কবিরজ্ঞন উপাধিতে ভূষিত করেন।

শ্যামা মা ছিলেন রামপ্রসাদের ধ্যান-জ্ঞান।আহারে-বিহারে, শয়রে-ম্বপনে তিনি শুধু মায়ের চিন্তা করতেন।অন্য কোনো কিছুই তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না।তিনি হাতে কাজ করতেন, মুখে শ্যামা মায়ের নাম নিতেন।এই একনিষ্ঠতার কারণে শ্যামা মা-ও তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে গিয়েছিলেন।ঘটনাটি এরূপ;;;

একদিন রামপ্রসাদ ঘরের বেড়া বাঁধছিলেন।অপর পাশ থেকে মেয়ে জগদীশ্বরী তাঁকে সাহায্য করছিল।এক সময় বয়সের চাপল্যবশত জগদীশ্বরী খেলতে চলে যায়।তখন মা শ্যামা মেয়ের রূপ ধরে এসে রামপ্রসাদকে কাজে সাহায্য করেন।অনেকক্ষণ পরে জগদীশ্বরী এসে দেখে বাবার বেড়া বাঁধা হয়ে গেছে।সে বাবাকে সব খুলে বলল।তখন রামপ্রসাদ বুঝতে পারলেন শ্যামা মা-ই তার মেয়ে রূপ ধরে এসেছিল।রামপ্রসাদ মা-মা বলে ডাকতে লাগলেন।ভক্তিভাবে তাঁর দুচোখ দিয়ে অশ্রচ গড়িয়ে পড়তে লাগল।

রামপ্রসাদের সাধনার চলতে লাগল।গভীর থেকে গভীরে।রাতদিন তিনি শুধু মায়ের চিন্তায়ই মগ্ন থাকেন।তাঁর এই একনিষ্ঠ সাধনার একদিন মা এসে দেখা দিলেন।চারদিক আলোকিত করে তিনি রামপ্রসাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।রামপ্রসাদ মায়ের চরণে পুষ্পাজ্ঞলি অপন করলেন।তাঁর সাধনার সিদ্ধ হলো।মাতৃরূ ঈশ্বর সাধনার যে দৃষ্টান্ত রামপ্রসাদ স্থাপন করলেন, তা-ই পরবতীকালে শ্রীরামকৃষ্ণ, বামাক্ষেপা প্রমুখ সাধককে এ সাধনায় উদ্ধুদ্ধ করে।

রামপ্রসাদ মাতৃসাধনায় করতে গিয়ে যে-সব শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছেন, তা বাংলা সঙ্গীতজগতে এক অমূল্য সম্পদ।তাঁর গান গুলো রামপ্রসাদী গান নামে পরিচিত।এর মধ্য দিয়ে যেমন ঈশ্বরসাধনা হয়, তেমনি জন্মদাএী মায়ের প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।পৃথিবীতে মা হচ্ছেন সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপন।এই চিন্তা থেকেই হয়তো রামপ্রসাদ ঈশ্বরকে মাতৃজ্ঞানে আরাধনা করেছেন।১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই মাতৃসাধক ইহলোক ত্যাগ করেন।।

2 Comments

  • I can see that your website probably doesn’t have much traffic.
    Your posts are awesome, you only need more new readers.
    I know a method that can cause a viral effect on your site.
    Search in google: Jemensso’s tricks

  • Hello buddy. It was hard to find this article in google.
    It’s not even in top 10. You should focus on hq links
    from high authority websites in your niche. I know of a very effective free
    method to get strong backlinks and instant traffic.
    The best thing about this method is that you start
    getting clicks right away. For more details search in google for;
    masitsu’s tricks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *