ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ শহর মহাবলীপুরমে শ্রী কৃষ্ণের মাখন নাড়ু
অবস্থিত। এই মাখন নাড়ু আসলে একটি বিশালাকার গ্র্যানাইট প্রস্তরখণ্ড।
আজ আপনাদের জানাবো এই মাখন নাড়ু সম্পর্কিত নানা অজানা ঘটনা।
শ্রী কৃষ্ণের এই মাখন নাড়ুটি ভূমিতল থেকে ১.২-মিটার উচ্চতায় একটি ঢালু অংশে সামান্য নত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তার ভারসাম্য বজায় রেখে। এই পাথরটির উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার, প্রস্থ ৫ মিটার ও ওজন প্রায় ২৫০ টন। পাথরটির একাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় পাথরটিকে এখন
অর্ধ-গোলাকৃতি মনে হয়। এছাড়াও প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বিগত ১,২০০ বছর ধরে পাথরটি একই স্থানে রয়েছে।আরো একটি আশ্চর্যের বিষয় হলো এতো বড় একটি পাথর যা কি-না বছরের পর বছর ধরে দাড়িয়ে আছে তাও আবার মাত্র ২ ফুট জায়গার উপর।
এই পাথরটির প্রকৃত নাম বাণ ইরাই কল। তামিল ভাষায় এই নামের অর্থ হলো আকাশ দেবতার পাথর। পুরাণে বালক কৃষ্ণের মাখন চুরির অনেক গল্প পাওয়া যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই পাথরটির নাম রাখা হয়েছে শ্রী কৃষ্ণের মাখন নাড়ু। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত একটি পর্যটন সাময়িকীতে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে, মহাবলীপুরম সফরে আসেন ভারতের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন তিনি এই পাথরটির নাম রাখেন কৃষ্ণের মাখন নাড়ু। কৃষ্ণের মাখন নাড়ু পেরুর ওলানটাইটাম্বো ও মাচু পিচুর একশিলা স্তম্ভগুলোর চেয়েও বড়ো ও বেশি ভারী।
কথিত আছে, দক্ষিণ ভারতের তামিল চোল সম্রাট প্রথম রাজারাজ চোল বিশাল এই পাথরটির ভারসাম্য বজায় রাখার অদ্ভুত ক্ষমতা দেখে এবং অনুপ্রাণিত হয়ে তাঞ্জাভুর বোম্মাই নামে এক বিশেষ ধরনের পুতুল তৈরি করেন। এই পুতুলটি একটি অর্ধ-গোলাকৃতি ভিত্তির উপর দাড়ানো এবং কেউ সেটিকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি পড়ে না গিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। কথিত আছে, একবার পল্লব সম্রাট নরসিংহবর্মণ পাথরটি স্থানচ্যূত করার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। ১৯০৮ সালে মহাবলীপুরমের তৎকালীন গভর্নর আর্থার হ্যাভলক নিরাপত্তাজনিত কারণে সাতটি হাতির সাহায্যে এই পাথরটি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। সাতটি হাতি পাথরটিকে একবিন্দুও সরাতে পারে নি।
সে বিজ্ঞান হোক বা অতিপ্রাকৃত শক্তি। এই মাখন নাড়ু মহাকর্ষের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করছে। মনে হয় এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে পাথরটি কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো বড় সব প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন সুনামি, ঘূর্ণিঝড় এমনকি ভূমিকম্পও নড়াতে পারেনি এই পাথরটিকে।
অবিশাস্যভাবে ভারসাম্য বজার রেখেছে এই পাথরটি।
এখনো অনেক জায়গা এবং অনেক জিনিস আছে যা বৈজ্ঞানিক যুক্তিকেও হার মানায়, তেমনি একটি হলো শ্রীকৃষ্ণের এই মাখন নাড়ুটি।