১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ডাহাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রভু জগদ্বন্ধু।তাঁর পিতা দীননাথ চক্রবতী, মাতা বামা দেবী।বাবা-মার তৃতীয় সন্তান ছিলেন জগদ্বন্ধু।দীননাথের পিতৃনিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার কোমরপুর গ্রামে।পদ্নার ভাঙনে গ্রামটি বিলীন হয়ে গেলে তাঁরা গোবিন্দপুর গ্রামে এসে বসবাস করেন।দীননাথ ছিলেন একজন শাএজ্ঞ ব্রাক্ষণ পন্ডিত।পন্ডিত্যের জন্য তিনি ন্যায়রত্ন, উপাধি পেয়েছিলেন।কর্মোপলক্ষে তিনি মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলেন।সেখানে অল্প বয়সে তাঁর সএী মৃত্যু হয়।জগদ্বন্ধুর তখন শৈশব অবস্হা।সএী মৃত্যু পর দীননাথ চলে আসেন স্বগ্রাম গোবিন্দপুরে।তখন জগদ্বন্ধুর লালন-পালনের ভার পড়ে তাঁর জেঠতুত বোন দিগম্বরীর ওপর।
জগদ্বন্ধুর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।এর কয়েক মাস পর গোবিন্দপুর গ্রামটিও পদ্নার ভাঙনে পড়ে।তখন চক্রবতী পরিবার চলে আসে ফরিদপুরের শহরতলি ব্রাক্ষণকান্দায়।জগদ্বন্ধু ফরিদপুর জেলা স্কুলের ছাএ ছিলেন।পরে তিনি পাবনা শহরে গিয়ে পড়াশোনা করেন।শহরের উপকন্ঠে ছিল এক প্রাচীন বটগাছ।তাঁর নিচে থাকতেন এক বাকসিদ্ধ মহাপুরুষ।মানুষ তাঁকে ক্ষ্যাপা বাবা বলে ডাকত।একদিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জগদ্বন্ধু।জগদ্বন্ধু তাঁকে বলতেন বুড়ো শিব।সময় পেলেই জগদ্বন্ধু তাঁর কাছে যেতেন। এর ফলে দুজনের মধ্যে ভাব হয়ে যায়।জগদ্বন্ধুর ভেতরে একটা পরিবতন আসে।তিনি গৌরাঙ্গ ভাবে ভাবিত হয়ে ভক্তিধর্মের পদ রচনা করতে শুরু করেন।আর অবসার পেলেই বটগাছের নিচে গিয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতেন।এর ফলে তাঁর পড়াশোনা বেশি দূর এগোয় নি।পাবনা শহর ও শহরতলিতে তাঁর এক তরুণ ভক্তদল গড়ে ওঠে।জগদ্বন্ধুর প্রকৃত নাম ছিল জগৎ।কিন্তু তাঁর ভক্তরা তাকে ডাকতেন প্রভু জগদ্বন্ধু বলে।পরবর্তীকালে তিনি এই নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।জগদ্বন্ধু একদিন ভক্তদের ছেড়ে র্তীথ ভ্রমণে বের হন।তিনি বিভিন্ন র্তীথ ও গ্রাম-গঞ্জে হরিনাম বিলিয়ে উপস্থিত হন শ্রীধাম বৃন্দাবনে।সেখানে তাঁর সাধনার চলতে থাকে গভীরে।তিনি শ্রীধামার ভক্ত হয়ে যান।রাধার নাম শুনলেই তিনি ভাবে বিভোর হয়ে যেতেন।
বৃন্দাবনে কিছুকাল থেকে জগদ্বন্ধু ফিরে আসেন ফরিদপুরে।১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাক্ষণকান্দায় আসন পাতেন।তখন ফরিদপুরে উপকন্ঠে ছিল সাঁওতাল, বাগনী ও নমঃশূদ্রদের বাস।সমাজপতিদের দৃষ্টিতে তারা ছিল ঘৃণা ও অস্পৃশ্য।এদের জন্য জগদ্বন্ধুর মন কেঁদে উঠল।তিনি একদিন বাগনীদের সর্দার রজনীকে ডেকে পাঠালেন।রজনী এলে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।প্রভুর আলিঙ্গনে রজনী ধন্য হলেন।রজনী বললেন, আমরা নিচু জাতি।সবই আমাদের ঘৃণা করে আর তুমি আমাকে আমাকে বুকে টেনে নিলে।
প্রভু তখন বললেন, কে বলেছে তোমরা নিচু জাতি?
মানুষের মধ্যে কোনো উচু-নিচু নেই।সবাই সমান।সবাই ঈশ্বরের সন্তান।তোমরা সবাই শ্রীহরির দাস।তোমাদের পাড়ার সকলে মোহান্ত বংশ।আজ থেকে তোমার নাম হরিদাস মোহান্ত।ভুবন মঙ্গল হরিনাম কর।সকলে ধন্য হও।অচিরেই তোমাদের সকল দুঃখ ঘুচে যাবে।
প্রভু কথা আর ব্যবহারে রজনী অভিভূত হয়ে গেলেন।তিনি বাড়ি ফিরে সবাইকে এ-কথা বললেন।সবাই মিলে হরিনামে মেতে উঠলেন।হরিদাস মোহান্ত অল্পদিনেই মধ্যেই প্র্ভুর কৃপায় প্রসিদ্ধ পদর্কীতনীয়া রূপে আত্নপ্রকাশ করলেন।ধীরে ধীরে ফরিদপুর,বরিশাল, যশোর প্রভৃতি জেলায় হরিনাম র্কীতনের এক অদ্ভুত সাড়া পড়ে গেল।প্রভুর হরিনাম র্কীতনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে মহানাম সম্প্রদায়।এ সম্প্রদায় গঠনে যাঁর অবদান বেশি, তিনি হলেন প্রভুর অনুরক্ত ভক্ত শ্রীপাদ মহেন্দ্রজী।
পশ্চিমবঙ্গেও প্রভুর নামের মাহাত্ন্য পরিব্যাপ্ত হলো।সেখানকার নীচু জাতি হিসেবে গণ্য ডোমেরা প্রভুর প্রেরণায় উজ্জীবিত হলো।কোলকাতার ডোমপল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে সংকীতনের দল গড়ে উঠল।তাঁরা হয়ে উঠল ব্রজজন ।মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষরূপে মাথা উঁচু করে সমাজে চলার সাহস পেল তারা।সমাজ পরিবতনে প্রভু জগদ্বন্ধুর এই অবদান চিরস্মরণীয়।
প্রভু একদিন ভক্তদের নিয়ে ভ্রমণে বের হন।ফরিদপুর শহরের ।অনতিদূরে এক জঙ্গালার্কীণ জায়গায় এসে তিনি বলেন,এখানেই আমি শ্রীঅঙ্গন প্রতিষ্ঠা করব।এরপর তাঁর অনুপ্রেরণায় ঐ স্থানে শ্রীঅঙ্গন প্রতিষ্ঠিত হলো।এই শ্রীঅঙ্গনে শুরু হয় প্রভুর গম্ভীরা লীলা।১৩০৯ সালের (১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ)আষাঢ় থেকে আরম্ভ করে ১৩৩৫ সালের (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ)১৬ ফাল্গুন পযন্ত ১৬ বছর ৮ মাস প্রভুর গম্ভীরা লীলা চলে।এ সময় তিনি ছিলেন মৌনী।এর তিন বছর পরে ১৯২১ খ্রিষ্টাদ্বে প্রভু ইহলীলা সংবরণ করেন।
প্রভু জগদ্বন্ধু শ্রীশ্রীহরিকথা’ চন্দ্রপাত; ও এীকাল’ নামে তিনখানা গ্রন্থ এবং বহু র্কীতন রচনা করে গেছেন।