সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ জন অসুর কে কে

অসুর ও দেবতারা একই পিতা প্রজাপতি থেকে জন্ম লাভ করে। তাদের বাসস্থান ও একই তা হলো লোক।তাঁরা এক সাথে একই খাদ্য ও সমাপান করেন।তাঁদের সহজাত অনেক দক্ষতা, জ্ঞান ও বিশেষ শক্তি আছে, কিন্তু দেবতারা ও অসুরদের মধ্যে পার্থক্য হলো তাদের নিজেদের অভিপ্রায়, কর্ম এবং কোন পথে চলবে তার মধ্যে।হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে কিছু কিছু অসুর খুবই বুদ্ধিমান, আবার কেউ কেউ খুবই বুদ্ধিহীন।চলুন দেখি সকল অসুরদের মধ্যে কে ছিল সবশক্তিশালী।

১.মধুকৈটভ


হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–  দৈত্য। মধু ও কৈটভ নামক দু্জন দৈত্যের একত্রিত নাম হলো– মধুকৈটভ। মার্কেণ্ডয় পুরাণ মতে– প্রলয়-সমুদ্রে বিষ্ণু যখন অনন্তনাগের উপর যোগ নিদ্রায় ছিলেন, তখন তাঁর নাভি থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে দুটি দৈত্য জন্মলাভ করেন। এই দৈত্য দুটির নাম ছিল মধু ও কৈটভ। দৈত্যরা ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হলে– ইনি যোগনিদ্রারূপী মহামায়ার বন্দনা করেন।

মহামায়া বিষ্ণুর দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে নিজেকে ব্রহ্মার সামনে নিজেকে প্রকাশ করেন। পরে ব্রহ্মাকে অভয় দান করে অন্তর্হিত হলে– বিষ্ণু নিদ্রা থেকে জেগে উঠে দৈত্যদের আক্রমণ করেন। এরপর বিষ্ণু এদের সাথে পাঁচ হাজার বছর যুদ্ধ করেন। কারণ এই দৈত্যরা মহামায়ার দ্বারা অনুগ্রহভাজিত ছিল। ফলে শেষ পযর্ন্ত যুদ্ধে কোন পক্ষই জয়লাভ করতে সক্ষম হলো না।

এরপর দৈত্যরা বিষ্ণুর যুদ্ধে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুকে বর দিতে ইচ্ছা করেন। বিষ্ণু বলেন যে– লোক হিতার্থে তোমরা আমার বধ্য হও। দৈত্যরা বিষ্ণুকে বলেন যে– তুমি আমাদেরকে জলহীনস্থানে হত্যা কর। এরপর বিষ্ণু তাঁর হাটুর উপর উভয় দৈত্যকে রেখে সুদর্শন চক্র দ্বারা তাঁদের শিরোশ্ছেদ করেন। পরে এই দুই দৈত্যের দেহের মেদ থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বলে– হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে পৃথিবীর অপর নাম মেদিনী। 

      ২. রাবণ

রাবণ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র ও প্রধান খলনায়ক। তিনি মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত লঙ্কা দ্বীপের রাজা। রামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে হরণ করে তিনি লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতার উদ্ধারকল্পে কিষ্কিন্ধ্যার বানর সেনার সাহায্যে রামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণ করলে রাবণের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। এই ঘটনা রামায়ণ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য। রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে তার পূর্বজীবনের কথা বলা হয়েছে।রাবণের প্রকৃত নাম দশগ্রীব।

তার রাবণ নামটি শিবের দেওয়া। জনপ্রিয় শিল্পে তার দশটি মাথা, দশটি হাত ও দশটি পা দর্শিত হয়। মহাকাব্যে কামুক ও ধর্ষকামী বলে নিন্দিত হলেও রাবণকে মহাজ্ঞানী ও তাপস বলা হয়েছে। উত্তর ভারতে দশেরা উৎসবে রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ আজও এক জনপ্রিয় প্রথা। রাবণ আদি যুগে সর্বপ্রথম মর্তে উড়ন্ত যান পুষ্পক রথ ব্যবহার করেন।

৩. বৃত্র

বৃত্র, একটি সর্প বা ড্রাগন অসুর, এবং  se খরা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ।তিনি নদীর গতিপথকে অবরুদ্ধ করেছিলেন এবং ইন্দ্র তাকে হত্যা করেছেন।ঋদ গ্বেদ যেমন  এসে বৃত্ররা পৃথিবীর জলকে আঁকিয়ে রেখেছিলেন ।ইন্দ্র বৃত্রকে হত্যা করেছিলেন, নদী মুক্ত করার পূর্বে বৃট্রের সমস্ত ৯৯ দুর্গ ধ্বংস করেছিলেন।যুদ্ধের সময় ইন্দ্রের দুটি চোয়াল ভেঙেছিল,তবুও তিনি বৃত্ররাকে হত্যা করতে পেরেছিলেন।এই কীর্তির জন্য, ইন্দ্র বৃত্তিহান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল ।

৪. ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদ/

মেঘনাদ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ–এ বর্ণিত এক পৌরাণিক যোদ্ধা। সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী তিনি সমগ্র মানব, দানব, অন্যান্য সৃষ্টি ও দেব-দেবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বীরযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম একজন ও একমাত্র অতি মহারথী {(বীরত্বের শ্রেণীবিভাগে শুধু ‘মহামহারথীরা’ (যথা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহাদেব ইত্যাদি)} ‘অতিমহারথী’ ইন্দ্রজিৎ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। দানবদের গুরু শুক্রের শিষ্য ত্রিমূর্তিধারী ইন্দ্রজিৎ রাবণের পুত্র। মেঘনাদ রাম ও রাবণের মধ্যে সংঘটিত লঙ্কার যুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি যুদ্ধে গমন করার পূর্বে এক যজ্ঞানুষ্ঠান করতেন। এই যজ্ঞের বলে অজেয় হয়ে তিনি দুইবার রাম ও লক্ষ্মণকে পরাভূত করেন। কিন্তু তৃতীয় বারে বিভীষণের সহায়তায় লক্ষ্মণ যজ্ঞাগারে উপস্থিত হয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে বধ করেন।কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত বাংলা রামায়ণে বর্ণিত মেঘনাদের উপাখ্যান অবলম্বনে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত একটি বাংলা মহাকাব্য রচনা করেন। মেঘনাদবধ কাব্য নামক এই মহাকাব্যটি বাঙালি সমাজে আজও বিশেষ জনপ্রিয়।

৫. হিরণ্যকশিপু

হিরণ্যকশিপু ছিলেন হিন্দু ধর্মে বর্ণিত জনৈক দৈত্যরাজ। তিনি পরম বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের পিতা।মহর্ষি কশ্যপের ঔরসে তৎপত্নী দিতির গর্ভে এই দৈত্যের জন্ম হয়। তার ভাইয়ের নাম হিরণ্যাক্ষ। হিরণ্যাক্ষ বিষ্ণু’র হাতে নিহত হলে হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মা’র কঠোর তপস্যায় নিযুক্ত হয় এবং তার নিকট এরূপ বর প্রাপ্ত হয় যে, সে জীব-জন্তু ও যে-কোন অস্ত্রের অ-বধ্য হবে এবং ভূতলে, জলে বা শূণ্যে ও দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা তার মৃত্যু হবে না।

এরূপ বরে প্রচণ্ডভাবে দৃপ্ত ও উজ্জীবিত হয়ে হিরণ্যকশিপু যথেচ্ছাচার নিয়ম-কানুন করে রাজ্যশাসন করতে লাগল। হিরণ্যকশিপু’র পত্নীর নাম কয়াধু। তার গর্ভে চারটি পুত্র জন্মে। তন্মধ্যে প্রহ্লাদ সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন।

এছাড়াও, প্রহ্লাদ পরম বিষ্ণুভক্ত ছিলেন, কিন্তু হিরণ্যকশিপু ঘোর বিষ্ণুদ্বেষী ছিলেন। পিতার তাড়নায় এবং শিক্ষকের উপদেশে প্রহ্লাদ হরিনাম ত্যাগ না করায় হিরণ্যকশিপু তার প্রাণনাশের আদেশ দিলেন। বিষাক্ত সাপের বিষ প্রয়োগ, প্রজ্জ্বলিত আগুন, গভীর জলে ডুবানো, হাতির পদতলে পৃষ্ট হওয়াসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের মৃত্যু হয়নি দেখে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে নিজ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুই এ সমস্ত বিপদ, সংকট হতে কিভাবে পরিত্রাণ পেলে?” প্রহ্লাদ হিরণ্যকশিপু’র প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “সর্ববিপদভঞ্জন হরিই আমাকে এ সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন”। এরপর হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর হরি কোথায় থাকে রে?” প্রত্যুত্তরে শিশু প্রহ্লাদ বললেন, “তিনি সবসময়, সব জায়গায় অবস্থান করেন।

দৈত্যরাজ পুণরায় তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর হরি এক্ষণে এ স্ফটিকস্তম্ভে আছে কি?” প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, “আছেন বৈ-কি!” এ কথা শুনে প্রচণ্ড গর্জন করে দৈত্য হিরণ্যকশিপু ঐ স্ফটিকস্তম্ভ পা দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন। ঐ মূহুর্তেই তা হতে এক নরসিংহ মূর্তি নির্গত হয়ে হিরণ্যকশিপুকে স্বীয় দুই উরুর উপর রেখে দিন ও রাতের সন্ধিকালে নখ দিয়ে রক্তাক্ত করে সংহার করে।

৬. রক্তবীজ

রক্তবীজ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণমার্কণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত শুম্ভ ও নিশুম্ভের প্রধান সেনাপতি । মহাদেবের আশীর্বাদে মহাদানব রক্তবীজের শোণিত ধরনীতলে পতিত হইলেই এক নতুন রক্তবীজের সৃষ্টি হইত ।

দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কেণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে যখন শুম্ভ ও নিশুম্ভ ত্রিলোক বিজয় করে ঋষিদের অত্যাচার ও দেবতাদের স্বর্গচ্যুত করে তখন দেবতারা মহামায়ার স্তব করেন । দেবতার স্তুতিতে প্রসন্ন হয়ে পার্ব্বতীর গাত্র কোষ হইতে পরম তেজস্বী, পরম রূপবতী নারীর আবির্ভাব হয় । পার্ব্বতীর কোষ হইতে সমুৎপন্ন বলিয়া সেই মহাকায়া দেবী কৌষিকী নামে বিখ্যাতা হয় ।

দেবী কৌষিকী রূপভেদে দুর্গা । আর দেবী পার্ব্বতীর গাত্রবর্ণ কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে বলিয়া দেবী কালীকা নামে বিখ্যাতা হন । দেবতাদের অভয় প্রদান করে দেবী কৌষিকী, শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধের নিমিত্ত রণক্ষেত্রে গমন করেন। রক্তবীজ সমরক্ষেত্রে অবতরণ করে দেবীর সহিত যুদ্ধাভিলাষে উদ্যত হয় । দেবী খড়্গ প্রহারে রক্তবীজের মুণ্ডছেদন করে । অনন্তর মহাসুরের শোণিতধারা ভূমিতলে পতিত হয় ও পতিত রুধি হইতে সহস্র রক্তবীজের সৃষ্টি হয়।

দেবী কখনও খড়্গ কখনও শূল প্রহারে নবসৃষ্ট রক্তবীজের দেহ বিদারণ করিল কিন্তু নবসৃষ্ট সহস্র রক্তবীজের শোণিতধারা হইতে পূর্ব্বের ন্যায় অযুত লক্ষাধিক নতুন অসুরের সৃষ্টি হইল । অনন্তর রণভূমি রক্তবীজে পরিব্যপ্ত হইয়া উঠিল । সেই মহাসুরকে দমন করা দুসাধ্য জ্ঞাত হইয়া সেই মহাদেবী কৌষিকী, প্রলয়কারী দেবী কালীকাকে আহ্বান করেন ।

রণক্ষেত্রে কালীকা দেবি অবতরণ হইবামাত্র দেবীকে আদেশ করিয়া কহিলেন, কালী তোমার জিহ্বা বিস্তার করিও, আমি রক্তবীজের দেহ বিদারণ করিবামাত্র তুমি মহাসুরের রক্ত পান করিও । এইরূপে রক্তবীজের রক্ত ধরনীতলে পতিত না হওয়ায় ফলে নতুন রক্তবীজ সৃষ্টি হইবে না  দেবী রক্তবীজের হনন করিবামাত্র কালীকা দেবীও সেই শোণিতধারা পান করে ফলে সকল রক্তবীজের বিনাশ হয় ।

৭. রাহু

রাহু হিন্দু জ্যোতিষ অনুসারে স্বরভানু নামক এক অসুরের কর্তিত মুন্ড, যে গ্রহণের সময় সূর্য বা চন্দ্রকে গ্রাস করে। একে আটটি শ্যামবর্ণ ঘোড়ায় টানা রথে আরূঢ় স্কন্ধহীন সর্পরূপে চিত্রিত করা হয়। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে, একে নবগ্রহের মধ্যে একটি স্থান দেওয়া হয়েছে। দিবাভাগে রাহুকাল নামক মুহূর্তকে ( অশুভ বলে গণ্য করা হয়।

পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় রাহু (স্বরভানু) নামক এক অসুর লুকিয়ে দিব্য অমৃতের কয়েক ফোঁটা পান করে। সূর্য্য ও চন্দ্রদেব তাকে চিনতে পেরে মোহিনী অবতাররূপী ভগবান বিষ্ণুকে জানায়। তৎক্ষণাৎ,অমৃত গলাধঃকরণের পূর্বেই বিষ্ণু আপন সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে রাহুর ধড় থেকে মুন্ড ছিন্ন করে দেন।

অমৃত পানের জন্য মুন্ডটি অমরত্ব লাভ করে এবং এভাবেই রাহু গ্রহটির উৎপত্তি হয়; বাকী মুন্ডহীন দেহটির নাম হয় কেতু। সূর্য্য ও চন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাহু এদেরকে গ্রাস (গ্রহণ) করে ফেলে। কিন্তু এই গ্রহণের পর সূর্য্য ও চন্দ্র রাহুর কাটা গ্রীবা থেকে আবার বেরিয়ে আসে।

৮. হিরণ্যাক্ষ

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে- মহর্ষি কশ্যপের ঔরসে দিতির গর্ভে হিরণ্যকশিপু ও হিরণাক্ষের জন্ম হয়। কথিত আছে, বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর জয় ও বিজয় নামে দুজন দ্বাররক্ষক ছিলেন। একদিন সনন্দাদি ঋষিগণ বিষ্ণুলোকে আসেন। কিন্তু ঋষিদের অদ্ভুত মূর্তি দেখে এই দুই দ্বাররক্ষক বিষ্ণুপুরীতে ঢুকতে বাধা দেন। এত ঋষিরা অপমানিত হয়ে, তাঁদেরকে অসুরযোনি প্রাপ্ত হওয়ার অভিশাপ দেন।

অভিশপ্ত এই দুজন স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হতে থাকলে, দয়া পরবশ হয়ে ঋষিরা পুনরায় বর দেন যে এঁরা তিন জন্ম পরে শাপ মুক্ত হবেন। এই দুজনের প্রথম জন্মে হয় হিরণ্যকশিপু ও হিরণাক্ষ হিসাবে। দ্বিতীয়বার জন্ম হয় রাবণ ও কুম্ভকর্ণ হয়ে এবং তৃতীয়বার জন্ম হয় শিশুপাল ও দন্তবক্র হয়ে।একদিন দিতি সন্ধ্যাকালে কামাতুরা হয়ে কশ্যপের কাছে এসে সন্তান প্রার্থনা করেন।

ঋষি স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ করে বলেন যে- তোমার চিত্ত অপবিত্র ও কামাতুরা। এই জন্য তোমার দুটি অধম পুত্র হবে। সে সময় দিতি প্রার্থনা করেন যে, তাঁর এই পুত্র যেন বিষ্ণু কর্তৃক নিহত হয়। কশ্যপ সেই বরই দিলেন। দিতির শত বৎসর গর্ভধারণের পর হিরণ্যকশিপু ও হিরণাক্ষের জন্ম হয়। এরা দুজনই অত্যন্ত অত্যাচারী হয়ে উঠলে হিরণাক্ষ বরাহরূপী বিষ্ণু কর্তৃক নিহত হন।

৯. বাণাসুর

বাণ (বা বাণাসুর) হিন্দু কিংবদন্তি মতে একজন সহস্র বাহুধর অসুর রাজা এবং বলির পুত্র।শোণিতপুরকে রাজধানী করে বাণাসুর মধ্য আসামে রাজত্ব করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বাণাসুর একজন কিরাট রাজা ছিলেন।প্রতাপী অসুর রাজা বাণাসুর একটি বৃহৎ রাজ্য শাসন করতেন। বিষ্ণুর কথা মতে বিশ্বকর্মার প্রদান করা রাসলিঙ্গকে তিনি পূজা করেছিলেন।

শিবতাণ্ডব নৃত্য করাকালীন ভক্ত বাণ তাঁর সহস্র বাহু দিয়ে মৃদঙ্গ বাজিয়েছিলেন। বাণের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে শিব‌ তাঁকে বর দেন এবং বাণকে রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সময়র সাথে সাথে বাণ নিষ্ঠুর এবং দাম্ভিক হয়ে ওঠে। বহু ডেকা কন্যার পাণি গ্রহণ করার জন্য তিনি কন্যা ঊষাকে অগ্নিগড়ের দুর্গে বন্দী করে রাখেন। একদিন ঊষা স্বপ্নে একজন পুরুষের দেখা পেয়ে প্রেমে পড়েন। ঊষার সখী ছিলেন বাণ রাজার মন্ত্রী কুম্ভাণ্ডর কন্যা চিত্রলেখা। প্রতিভাবান চিত্রকর চিত্রলেখা বহু ছবি আঁকি দেখানোয় স্বপ্নের পুরুষটি শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধ বলে শনাক্ত করে। মায়াজালের দ্বারা চিত্রলেখা অনিরুদ্ধকে অপহরণ করে ঊষার কাছে নিয়ে আসে।

এই কথা জানতে পেরে বাণ অনিরুদ্ধকে বন্দী করে রাখে। কৃষ্ণ‌ অনিরুদ্ধকে মুক্ত করতে আসায় বাণাসুরের রক্ষক শিবের সঙ্গে তাঁর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধকে হরি-হর যুদ্ধ বলে।যুদ্ধে রক্তের ধারা বয়ে যাবার জন্য স্থানটি পরবর্তীকালে তেজপুর বা শোণিতপুর বলে পরিচিত হয়। ব্রহ্মার হস্তক্ষেপে কৃষ্ণ এবং শিব‌ যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয়।এরপর কৃষ্ণ বাণাসুরের দুটি হাতের বাইরের সকলগুলি কেটে ফেলেন। বাণাসুর কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চান এবং ঊষাকে অনিরুদ্ধের সঙ্গে বিয়ে দেন।

১০.ভস্মাসুর

পুরাকালে ভস্মাসুরের সাধনায় প্রসন্ন হয়ে শিব ভস্ম কঙ্কনের বর দান করলেন। এমন কঙ্কন যে কারও গায়ে ছোঁয়ালে সে তক্ষুনি ভস্ম হয়ে যাবে। ভস্মাসুরের ইচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করা। নারদ মুনির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শিবের পত্নী পার্বতীকে বিয়ের জন্য ভস্মাসুর শিবের খোঁজে চলল।

শিব সমস্ত কথা টের পেয়ে মাছির মতো ছোট হয়ে আকন্দ ফুলের মধ্যে লুকান। পার্বতী বিষ্ণুকে সব জানালে তিনি পার্বতীর মোহিনীরূপ হিসেবে ভস্মাসুরের সঙ্গে রাস্তায় দেখা করলেন।পার্বতী ভস্মাসুরের সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বললে শর্ত হিসেবে সমান তালে নাচার শর্ত দেন। নাচতে নাচতে এক সময় বিষ্ণু নিজের মাথায় হাত রাখলেন। দেখাদেখি ভস্মাসুরও তার মাথায় হাত রাখল। যেমনি ভস্মাসুর নিজ মাথায় হাত রাখলো, অমনি পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *