শ্রীলভক্তিবেদান্তস্বামী প্রভুপাদ ১৮৯৬ খ্রিষ্টাদ্বের উওর কোলকাতায় হ্যারিসন রোডের ১৫১ নং বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতার নাম গৌরমোহন দে এবং মায়ের নাম রজনী।প্রভুপাদের প্রকৃত নাম অভয়চরণ দে।
গৌরমোহন এক জ্যোতিষীকে দিয়ে ছেলের কোষ্ঠী তৈরি করিয়েছিলেন।তিনি একদিন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।এই শিশু ৭০ বছরে সমুদ্র পাড়ি দেবে।বিদেশ যাবে।একজন ধমপ্রচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে এবং ১০৮ টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করবে।তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় সবটাই সত্যে পরিণত হয়েছে।অভয়চরণ ১৯৬৫ খ্রিষ্টাদ্বে ৬৯ বছর বয়সে আমেরিকান যান।সেখানে হিন্দু ধম প্রচার করেন।ক্রমশ তাঁর খ্যাতি পৃথিবীর সবএ ছড়িয়ে পড়ে।কৃষ্ণনাম প্রচারের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আন্তজার্তিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, সংক্ষেপে যা ইসকন নামে পরিচিত।আর তিনি পরিচিত হন শ্রীলভক্তিবেদান্তস্বামী প্রভুপাদ নামে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি শতাধিক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
গৌরমোহন দে ছিলেন একজন সন্ত্রাস্ত বস্ত্র-ব্যবসায়ী।কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন একজন বিশুদ্ধ বৈষ্ণব।নিয়মিত কৃষ্ণনাম জপ করতেন।মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ছিলেন তাঁর আদশ।চৈতন্য প্রবর্তিত হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
ছিল তাঁর সাধনার মূল মন্ত্র।তিনি নিয়মিত শ্রীমদভবদগীতা ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত পাঠ করতেন।তিনি চাইতেন ছেলে অভয়চরণও তাঁর মতো বৈষ্ণব হোক।এজন্য তিনি তাঁকে নিয়মিত রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে নিয়ে যেতেন।বালক বয়সেই তাঁকে মৃদঙ্গ বাজানো সেখান।ভজন র্কীতন ইত্যাদি শেখায় উৎসাহ দেন।
অভয়চরণের মা রজনী দেবী ছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব পরিবারের কন্যা।তাই তাঁর মধ্যে বৈষ্ণব ভাবের প্রকাশ ঘটে।তিনি ছিলেন পতিব্রতা ও ধমপরায়ণা একজন আদশ এী ও জননী।বালক অভয়চরণ দেখতেন, তাঁর মা কি রকম সরলতা সহকারে সকলের মঙ্গলের জন্য র্প্রাথনা করতেন।পূজা-পাবণ অনুষ্ঠান করতেন।মায়েই এই ভক্তি,সরলতা ও কতব্যপরায়ণতা বালক অভয়চরণের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
অভয়চরণ কোলকাতায় স্কটিশর্চাচ কলেজে স্নাতক শ্রেনীর ছাএ।এ সময় তাঁর বিয়ে হয়।স্ত্রীর নাম রাধারাণী দেবী।কিন্তু রাধারাণী পিএালয়েই অবস্থান করেছিলেন, অভয়চরণের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পযন্ত।
তখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছিল। অভয়চরণের ত্তপর তার একটা প্রভাব পড়ছিল।একই কলেজে এক ক্লাস ত্তপরে পড়তেন সুভাষচন্দ্র বসু ।তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয়ার জন্য ছাএদের উৎসাহ দিতেন।তাঁর ব্যক্তিত্ব ত্ত সাংগঠনিক ক্ষমতা দেখে অভয়চরণ মুগ্ধ হন। কিন্তু সরাসরি আন্দোলনে যোগ দেন না। তবে ইংরেজদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তাঁর একটা অনীহির ভাব সৃষ্টি হয়। এর চেয়ে তিনি ভারতের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকতর মঙ্গলজনক মনে করেন।
মহাত্না গান্ধীর আন্দোনলের প্রতিও অভয়চরণ একটা আকষণ অনুভব করতেন।মনোযোগ দিয়ে তিনি তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতি শুনতেন এবং পাঠ করতেন।
১৯২০ খ্রিষ্টাদ্বে অভয়চরণ সাফল্যের সাথে স্নাতক পরীক্ষায় উর্ওীণ হন।কিন্তু এ-সময় পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে শতশত নিরস্ত্র- নিরীহ মানুষকে ইংরেজ সৈন্যরা হত্যা করেন।এর প্রতিবাদে গান্ধীজীর ইংরেজদের সবকিছু বজনের আহ্বান জানান।এই আহ্বানের সাড়া দিয়ে অভয়চরণ তাঁর ডিগ্রী প্রত্যাখ্যান করেন।এ ঘটনার পর পিতার ইচ্ছায় তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং ১৯৩২ খ্রিষ্টাদ্বে এই কাজে সপরিবারে এলাহাবাদ চলে যান।
এলাহাবাদে এসে অভয়চরণের জীবনের মোড় ঘুরে যায়।এখানে তিনি শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্ততী ঠাকুরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।তাঁর সঙ্গে অভয়চরণের ইতঃপূর্বেও (১৯২২খ্রিষ্টাদ্বে) কোলকাতায় একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল।অভয়চরণ তখন স্বদেশী আন্দোলনের ভাবধারায় উদ্ধুদ্ধ ছিলেন।সরস্ততী ঠাকুর তখন তাঁকে বলেছিলেন, ‘এসব আন্দোলনের চেয়ে চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব আন্দোলন অনেক র্কাযকর।‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম“ র্কীতন অতি সহজেই সকল শ্রেনির মানুষকে কাছে টানতে পারে।সংসারের সমস্ত রকম দুঃখ-কষ্ট শান্তি দিতে পারে।কলিযুগে জীবোদ্বারের এটাই একমাএ পথ।সেই একই কথা ঠাকুর এবারও অভয়চরণকে বললেন।অভয়চরণ এবার গুরুর আর্দেশ শিরোর্ধায করে কাজ শুরু করে দিলেন।
অভয়চরণ গুরুর উপদেশ ও নিজের আদশ প্রচারের জন্য Back to godhead নামে একটি প্রএীকা প্রকাশ শুরু কররেন।শ্রীমদভবদগীতা, শ্রীমদভবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত তাঁর তিনটি প্রিয় গ্রস্থ ছিল।তিনি প্রথম দুটির ভাষ্য রচনা করেন।সবার কাছে তা অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে।তিনি তাঁর প্রএীকা এবং গ্রন্থ তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত মনীষীদের কাছে পযন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন।তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাত্না গান্ধী, পন্ডিত রাধাকৃষ্ণান, লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রমুখ।এদেঁর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ ও করেছেন।এঁরা তাঁর কাজে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।
অভয়চরণ এক সময় কৃষ্ণনাম বা কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের জন্য চাকরি, সংসার সব ছেড়ে দেন।ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।এক পযায়ে তিনি বৃন্দাবনে যান।সেখানে তিনি সন্ন্যাস-ধর্মে দীক্ষা নেন।তখন তাঁর নাম হয় অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্তস্বামী‘।আরো পরে তিনি শ্রীভক্তিবেদান্তস্বামী প্রভুপাদ নামে খ্যাত হন।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাদ্বের ১৪ নভেম্বর প্রভুপাদ শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবনে ইহলীলা সংবরণ করেন।