ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহাদেব হলেন ত্রিশক্তি। তারা সৃজন, পালন ও সংহার কর্তা। এই ত্রিশক্তিই নিয়ন্ত্রণ করছে এই মহাবিশ্বকে। এই ত্রিশক্তির মধ্যে যেমন সহাবস্থান আছে তেমনই আবার আছে বিরোধও। তেমনি একটা ঘটনা আজ আপনাদের জানাবো। পুরাণেই উল্লিখিত আছে এমন এক কাহিনি, যেখানে স্বয়ং বিষ্ণুর প্রাণ সংহার করতে বাধ্য হতে হয়েছিলেন মহাদেবকে।
ভাগবত পুরাণ থেকে জানা যায় যে, বিষ্ণু যখন হিরণ্যকশিপুকে সংহার করে তার ভক্ত প্রাহ্লাদকে রক্ষা করতে তৎপর হন, তখন বিষ্ণু ভয়ঙ্কর নৃসিংহের রূপ ধারণ করেছিল। হিরণ্যকশিপু মহাদেবের বরেই অবধ্য হয়ে উঠেছিল। মহাদেব হিরণ্যকশিপুকে এই বর দিয়েছিলেন যে, তাকে কোনও দানব, মানব, দেবতা অথবা পশু দিবসে বা রাত্রিকালে হত্যা করতে পারবে না।হিরণ্যকশিপু জল, স্থল বা অন্তরীক্ষেও থাকবেন অবধ্য।
সবকয়টি শর্ত পালন করেই বিষ্ণু নৃসিংহ অবতারে আবির্ভূত হয়েছিলেন হিরণ্যকশিপুকে বধ করার জন্য। বিষ্ণু দেবতা, মানব বা পশুতে আবির্ভূত হননি। তিনি যে সময়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন সেটা দিন বা রাত্রি ছিল না, সেই সময়টা ছিল গোধূলিবেলা।
তখন নৃসিংহ রুপি বিষ্ণু হিরণ্যকশিপুকে নিজের জানুতে স্থাপন করেন যা জল-স্তল-অন্তরীক্ষের বাইরে। অবশেষে তিনি ধারালো নখ দিয়ে হিরণ্য কশিপুকে হত্যা করেন। দানব হিরণ্যকশিপু নিহত হন এবং বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদ রক্ষা পায়। কিন্তু হিরণ্য কশিপুকে হত্যা করার পরেও নৃসিংহদেবের ক্রোধ সংবৃত হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতেই থাকেন। তখন দেবতারা মহাদেবের শরণাপন্ন হোন। দেবতারা বুঝতে পারেন, একমাত্র মহাদেবই এই ধ্বংসলীলা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। তখন মহাদেব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন যাতে তারা নৃসিংহকে থামাতে পারেন। কিন্তু নৃসিংহ এই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এই সময় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন নৃসিংহদেবকে আটকানোর জন্য। শরভ আসলে এক সুবিশাল পাখি। এই পাখির সহস্রবাহু এবং দেহ পশুর মতো । অবশেষে শরভ যখন নৃসিংহের উপর আঘাত করে তখন শরভের আঘাতে আত্মসংবরণ করেন নৃসিংহ। এই শরভ রুপি মহাদেবই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।