মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে, মন্দোদরী ছিলেন লঙ্কার রাজা রাবণের রাজমহিষী। রামায়ণে তাকে সুন্দরী, ধর্মপ্রাণা ও নীতিপরায়ণা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি পঞ্চকন্যার একজন ছিলেন। রামায়ণের যুদ্ধের পর সোনার লঙ্কা ছারখার হল, রাবণ ভূপতিত হলেন। লঙ্কার রাজা হলেন বিভীষণ। কিন্তু রাবনের মৃত্যুর পর মন্দোদরীর কী হয়েছিল? কী করলেন তিনি? আজ আপনাদের জানাবো রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী সম্পর্কে।
মন্দোদরী ছিলেন অসুররাজ ময়াসুর ও অপ্সরা হেমার কন্যা। উত্তর রামায়ণ গ্রন্থে মন্দোদরীর জন্মবৃত্তান্ত বর্ণিত আছে। ঋষি কশ্যপের পুত্র ময়াসুর হেমা নামক এক অপ্সরাকে বিবাহ করেছিলেন। তাদের দুই পুত্র ছিল – মায়াবী ও দুন্দুভি। কিন্তু তারা দুজনেই অনেক দিন ধরে একটি কন্যাসন্তান প্রাপ্তির ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। এজন্য তারা মহাদেবের তপস্যা করতে শুরু করেন।
রাবণের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কেন দ্বিতীয় বিবাহ করেছিল
সেই সময় মধুরা নামে এক অপ্সরা কৈলাস পর্বতে মহাদেবের পূজা করতে আসেন। সেই সময় পার্বতী না থাকায় মধুরা মহাদেবের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলো।
এজন্য ক্রুদ্ধ হয়ে দেবী পার্বতী মধুরাকে অভিশাপ দেন যে, সে বারো বছর ব্যাঙ হয়ে থাকবে। মহাদেব মধুরাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন যে বারো বছর পরে সে এক সুন্দরী নারীতে পরিণত হবে এবং এক মহাপরাক্রমী বীরের সঙ্গে তার বিবাহ হবে। এরপর বারো বছর পর মধুরা পুনরায় এক সুন্দরী নারীতে পরিণত হলো। তখন সে কুয়োর ভিতর থেকে চিৎকার করতে থাকে। কাছেই মায়াসুর ও হেমা তপস্যা করছিলেন। তারা মধুরার ডাকে সাড়া দেন এবং তাকে পালিতা কন্যারূপে গ্রহণ করেন। তারা মধুরাকে মন্দোদরী নামে প্রতিপালন করতে থাকেন। মায়াসুরের বাড়িতে এসে রাবণ মন্দোদরীর প্রেমে পড়ে যায়। অনতিকাল পরে রাবণ ও মন্দোদরীর বিবাহ হয়। রাবণ ও মন্দোদরীর তিনটি পুত্র সন্তান ছিল মেঘনাদ, অতিকায় ও অক্ষয়কুমার।
রাবণের অনেক দোষ সত্ত্বেও মন্দোদরী তাকে অনেক ভালবাসতেন এবং তার পরাক্রমের জন্য গর্বও অনুভব করতেন। সর্বদা মন্দোদরী ধর্মপ্রাণা নারী হিসেবে রাবণকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করতেন। কিন্তু রাবণ সর্বদাই মন্দোদরীর উপদেশ উপেক্ষা করতেন। সীতাকে অপহরণ করার মন্দোদরী সীতাকে শ্রীরামের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও, রাবণ তাতে কর্ণপাত করেননি। রামায়ণের যুদ্ধ শেষে বাবণ মৃত্যুবরণ করে। এরপর বিধ্বস্ত অবস্থায় রাবণের মৃতদেহের কাছে এসে শোক প্রকাশ করতে থাকেন মন্দোদরী। এই যুদ্ধে মন্দোদরী তার স্বামী, পুত্র ও সকল নিকটাত্মীয় হারিয়েছিলো।
রাবণের মৃত্যুর পর বিভীষণ মন্দোদরীকে বিবাহ করেন। কারণ একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, রাবণ মাতৃতান্ত্রিক জাতির প্রতিনিধি ছিলেন। এজন্য রাবণের মৃত্যুর পর শাসনক্ষমতা পেতে বিভীষণ রাজমহিষীকে বিবাহ করতে বাধ্য হন। যদিও পূর্বেই তার এক স্ত্রী ছিল। মন্দোদরী ও বিভীষণের বিবাহ ছিল মূলত রাজনৈতিক কূটবুদ্ধিপ্রসূত। এই বিবাহ কোনোভাবেই পারস্পরিক আকর্ষণের ভিত্তিতে হয়নি। লঙ্কার উন্নতি ও স্থিতিশীলতা, ও রাজকীয় ক্ষমতার জন্য মন্দোদরী বিভীষণকে বিবাহ করতে রাজি হয়েছিলেন।
মন্দোদরী ও বিভীষণের বিবাহের সিদ্ধান্তে লঙ্কা সঠিক দিশা পেয়েছিল।