প্রায় প্রতিঘরেই পূজার সামগ্রীর পাশাপাশি শঙ্খ রাখা হয়। নতুন কোন কাজ শুরু করার আগ মুহূর্তে শঙ্খ বাজানোর রীতি প্রচলিত আছে।সমুদ্র মন্থনে যে সকল জিনিস উঠেছিল , তার মধ্যে একটি গুরুত্ব পূর্ণ জিনিস হল শঙ্খ। শঙ্খ ভগবান বিষ্ণু তাঁর একটি অস্ত্র রূপে হস্তে ধারণ করেন . পূজার স্থলে শঙ্খ রাখলে , শঙ্খের পাদদেশে সূর্য.. চন্দ্র …ও বরুন দেব অবস্থান করেন।শঙ্খের সমগ্র শরীরে ব্রহ্মা অবস্থান করেন এবং সূঁচালো অংশে গঙ্গা ও সরস্বতী অবস্থান করেন। শঙ্খ এত পবিত্র।
কোন শঙ্খ বাড়িতে রাখলে মঙ্গল হয় এবং শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপান্ডবদের শঙ্খের নাম কি ছিলো?
বরাহ পুরাণ মতে,
মন্দিরের দরজা খোলার পূর্বে কিংবা পুজো শুরুর পূর্বে কিংবা সন্ধ্যা আরতির পূর্বে শঙ্খ বাজানো হয় .এর কারণ বাতাসের মধ্যে স্বাত্বিক , রাজসিক ও তামসিক তরঙ্গ বিরাজ করে .শঙ্খ বাদ্যের দ্বারা পবিত্র পূজার স্থলে শুধু স্বাত্বিক তরঙ্গ অবস্থান করে ।রাজসিক ও তামসিক তরঙ্গ দূরীভূত হয় ।তাই অবশ্যই পূজার স্থলে শঙ্খ বাজানো উচিত চৈতন্য , ভক্তি ও আনন্দ বজায় রাখার জন্য।
কোন শঙ্খ বাড়িতে রাখলে মঙ্গল হয় এবং শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপান্ডবদের শঙ্খের নাম কি ছিলো
শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক। একে বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গী হিসেবেও পূজো করা হয়। সৃষ্টির শুরুতে সমুদ্রগর্ভ হতে, পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু ও স্বর্গীয় দেবতাদের তৈরী ঘূর্ণাবর্তের মধ্য থেকে অস্ত্ররূপে শঙ্খকে হাতে ধরে আবির্ভাব হয় ভগবান বিষ্ণুর। অপরদিকে শঙ্খ ধন ও প্রতিপত্তির দেবী মা লক্ষীর আব্রু। “ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ” মতে, শঙ্খ ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠানকারী মন্দির।
মহাভারত, রামায়ণ ও অন্যান্য পুরাণে শঙ্খের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়।সাধারণ গৃহস্থে ব্যবহৃত শঙ্খ ছাড়াও গণেশ শঙ্খ, গোমুখ শঙ্খ, কৌড়ি শঙ্খ বিশেষ মঙ্গলশঙ্খ হিসাবে প্রসিদ্ধ।
শঙ্খ দুই প্রকার
১. বামাবর্ত শঙ্খ , এই শঙ্খসমূহের ঘূর্ণন বামদিকে।
এবং
২. দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ , এই শঙ্খসমূহের ঘূর্ণন ডানদিকে।
কোন শঙ্খ বাড়িতে রাখলে মঙ্গল হয় এবং শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপান্ডবদের শঙ্খের নাম কি ছিলো বামাবর্ত শঙ্খ পুজোর সময় বাদ্য রূপে ব্যবহৃত হয় .আর দক্ষিণাবর্ত শঙ্খসমূহ শ্রীবিষ্ণুর বিগ্রহে স্থান দিয়ে শ্রীবিষ্ণুস্বরূপে নিত্যপূজায় গৃহস্থের কল্যাণ হয়। দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ বা ভালামপুরী শঙ্খ অত্যধিক শুভ শঙ্খ হিসাবে পূজিত হয়।
শ্রী কৃষ্ণের শঙ্খ দক্ষিণাবর্তী।
বাজারে যে সকল শঙ্খের গায়ে অসংখ্য কাঁটা দেখতে পাওয়া যায় , এরা হল স্ত্রী প্রজাতির শঙ্খ বা শঙ্খিনী .বাড়িতে এগুলো.. রাখা ঠিক নয়।
কারণ এই শঙ্খের দ্বারা সৃষ্ট শব্দ সুমধুর নয় বরং কর্কশ .মূলত এই শঙ্খ অঘোরী বিদ্যায় ঋণাত্মক শক্তিকে আবাহন করার জন্য বাজানো হয়।
শঙ্খ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্যই জেনে রাখা উচিত।
১. যে শঙ্খ ব্যবহার করা হয়, সেটা কখনোই পূজোর শঙ্খ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
২. শঙ্খ বাজাবার পর সেটা ধুয়ে রাখা জল দিয়ে কখনোই দেব-দেবীকে অঞ্জলী দেয়া যাবে না।
৩. শিব পুজোয় শঙ্খ বাজানো যাবে না ।কিংবা শঙ্খের জল দ্বারা শিব স্নান করানো যাবে না।
৪. পুজোর স্থলে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খের সূঁচালো মুখ দেবতার দিকে রাখতে হবে।
৫. একসঙ্গে দুটি শঙ্খ রাখা উচিৎ নয়।
শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপাণ্ডবের শঙ্খের নাম
শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খের নাম- পাঞ্চজন্য।
যুধিষ্ঠিরের শঙ্খের নাম-অনন্ত বিজয়।
ভীমের শঙ্খের নাম- পৌন্ড্র।
অর্জুনের শঙ্খের নাম-দেবদত্ত।
নকুলের শঙ্খের নাম- সুঘোষ।
ও সহদেবের শঙ্খের নাম- মণিপুষ্পক।